আরবি: শাবান,১৪৪৬ হিজরী
ইংরেজি: ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সম্পাদক :
মাওলানা কাজিম আলি (আশিক হুসাইন)
সহযোগী সম্পাদক: রাজা আলী
প্রচ্ছদ ভাবনা:
মিনহাজউদ্দিন এবং মুন্তাজির গাজী
অনলাইন সেটিং: মিনহাজউদ্দিন
প্রকাশ:
আল -হুজ্জাত(আঃ) একাডেমী
বকচরা,মিনা খাঁন,উত্তর ২৪ পরগণা
__________________________________________
সূচিপত্র
💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐
💐কুরআন ও আহলে বাইত(আঃ) এর বার্তা💐
💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐
ইমাম মাহদী (আঃ) এর গায়বতের যুগ: আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য -- মাওলানা কবির আলি তরফদার কুম্মী
কুরআন ও হাদীসের আলোকে ইমাম মাহদী (আঃ)--মাওলানা মহম্মদ সুজাউদ্দিন মাসহাদী
আমাদের প্রতি ইমাম মাহদী (আঃ) এর পেয়গাম (অনুবাদ) -- মাওলানা কাজিম আলি তরফদার
গায়বাতে থাকা ইমামের উপকারিতা
সুন্নী আলীমদের মত:ইমাম মাহদী (আঃ)-ই দ্বাদশ ইমাম (অনুবাদ) -- মিনহাজউদ্দিন মন্ডল
ইমাম মাহদী (আঃ): দ্বীন ইসলামের সর্বশেষ প্রতিনিধি-- মো: মুনতাজির হোসেন গাজী
ইমাম মাহদী (আঃ) এর জন্য অপেক্ষা:গভীরতা ও গুরুত্ব -- রাজা আলী
💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐
💐💐💐💐কবিতায় দ্বীনি বার্তা💐💐💐💐💐
💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐
__________________________________________
সম্পাদকীয়
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের প্রতি। তাঁর অপার করুণায় অবশেষে আল-হুজ্জাত পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ প্রকাশিত হলো। ইমাম মাহদী আঃ আমাদের যুগের সর্বশেষ হাদী, যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশী সত্ত্বা এবং মহাকালের ত্রাণকর্তা।এ কারণেই এই মহা সত্ত্বা র প্রতি কোরান ও হাদীসে অসংখ্য নির্দেশিকা রয়েছে।যার মূল কথা হলো, ইমাম আঃ এর মারেফাত অর্জন ব্যতীত আমাদের মুক্তি নেই।আর তাঁর প্রতি আবেগ ও অপেক্ষা ই মুমিনের লক্ষণ। সুতরাং বর্তমান গায়বতের যুগে ইমাম কে চেনা এবং চেনানোর গুরুত্ব অপরিসীম।আর সেই প্রচেষ্টার ক্ষুদ্র অংশ হিসাবে আল হুজ্জাত পত্রিকা র অনলাইন সংস্করণ প্রকাশিত হলো।
ওয়াস সালাম
__________________________________________
------------------------------------------------
|| কুরআন ও আহলে বাইত(আঃ) এর বার্তা ||
------------------------------------------------
__________________________________________
ইমাম মাহদী (আঃ) এর গায়বাতের যুগ:আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম ইসলামের চূড়ান্ত যুগে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এক নেতা।যিনি দুনিয়ায় সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবেন এবং অত্যাচার ও অবিচারকে দূর করবেন। শিয়া মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে, তিনি বর্তমানে গায়বাতে আছেন এবং এক সুনির্দিষ্ট সময়ে আবির্ভূত হবেন। এই সময়কালে শিয়া মুসলিমদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশদভাবে বক্ষমাণ প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহর প্রতি গভীর ঈমান ও ইখলাস রাখা:
কুরআনে আল্লাহ বলেন, "তোমরা আল্লাহ এবং তার রাসুলের আনুগত্য কর এবং বিভেদে পড়ো না।" (সূরা আন-নিসা, ৪:৫৯) শিয়াদের উচিত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি অনুগত থেকে ইমাম মাহদীর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখা। এই গায়বাতের সময়কালে বিশ্বাসে অবিচল থাকা জরুরি, কারণ এটি একটি পরীক্ষার সময়কাল। এই সময় ঈমান দৃঢ় হলে তারা অন্য সকল প্রলোভন ও বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পাবে।
ইমামের জন্য অপেক্ষা করা (ইন্তিজার):
হাদিসে ইন্তিজার বা ইমাম মাহদীর জন্য অপেক্ষাকে ইবাদতের সমতুল্য বলা হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আমার উম্মতের মধ্যে যারা মাহদীর জন্য অপেক্ষা করবে, তারা আমার পথে থাকবে"(মুসনাদে আহমাদ)।
ইমামের জন্য অপেক্ষা করাটা শুধু সময় পার করা নয়, বরং তাঁর আদর্শকে ধারণ করা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখা।
নৈতিকতা ও সততার পথে চলা:
কুরআনে বলা হয়েছে, "আল্লাহ ন্যায়বিচার ও সদাচরণের নির্দেশ দেন"(সূরা আন-নাহল, ১৬:৯০) । শিয়া মুসলিমদের উচিত তাদের জীবনে নৈতিকতা বজায় রাখা এবং প্রতিটি কাজে সততার পথ অবলম্বন করা। ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক, তাই তাঁর অনুসারীদেরও উচিত প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।
ইমামের জন্য দোয়া করা:
ইমাম মাহদীর গায়বাতে তাঁর সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং দ্রুত আবির্ভাবের জন্য নিয়মিত ভাবে দোয়া করা শিয়াদের দায়িত্ব। ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের জন্য একটি বিশেষ দোয়া আছে—যা প্রতি শুক্রবার পাঠ করা হয়। এই দোয়া তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রকাশ, যা ঈমানকে আরও মজবুত করে তোলে।
ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন এবং প্রচার করা:
শিয়াদের উচিত ইমামের অনুপস্থিতিতে কুরআন, হাদিস, এবং আহলে বায়তের শিক্ষাকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করা এবং তা সমাজে প্রচার করা। ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম আসার পর তাঁর শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআনে বলা হয়েছে, "তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান প্রচার করো।" (সূরা আলাক, ৯৬:১)
সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা ও জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া:
ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম অবিচার এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন এবং তাঁর অনুসারীদের কাছ থেকেও এই প্রত্যাশা রয়েছে। শিয়াদের উচিত সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা এবং কোনো ধরনের অবিচার বা অন্যায়ের সাথে আপস না করা। কুরআনে আল্লাহ বলেন, "তোমরা ন্যায়ের পক্ষে সাক্ষ্য দাও, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে যায়"(সূরা আন-নিসা, ৪:১৩৫)।
ইমামের প্রতীক্ষায় আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় থাকা:
ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের গায়বাতের সময়কাল দীর্ঘ হলেও ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা শিয়াদের দায়িত্ব। ইমাম মাহদী আঃ এর প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসা এবং তাঁর আবির্ভাবের প্রতি আস্থা রাখা একজন শিয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য বলেই পরিগণিত হয়।
অন্যদের সাহায্য করা এবং দয়া প্রদর্শন করা:
ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম মানবতার জন্য দয়া ও সহমর্মিতার প্রতীক। শিয়াদের উচিত তাঁর গায়বাতের সময়েও এই গুণগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করা এবং সমাজে দরিদ্র ও নিপীড়িতদের সাহায্য করা। কুরআনেও বলা হয়েছে, "আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করেন" (সূরা আল-বাকারা, ২:১৯৫)।
ইমামের আদর্শ অনুসারে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে পরিবর্তন আনা:
ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম আসার পর তাঁর নেতৃত্বে শিয়াদের সত্যের পথে অবিচল থাকতে হবে। এজন্য বর্তমানে নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনেও পরিবর্তন আনা জরুরি। তাদের উচিত নিজেদের আচার-আচরণ, চিন্তাধারা এবং সামাজিক ভূমিকা ইসলামি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।
উপসংহার:
ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের গায়বাতে শিয়াদের দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী। আল্লাহ ও ইমামের প্রতি আনুগত্য, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ধৈর্য ও আশাবাদী থাকা, এবং ইসলামের আদর্শে নিজেদের জীবনকে পরিচালনা করা তাদের প্রধান কর্তব্য। যদি শিয়ারা তাদের এই দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম হয়, তবে তারা ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের যোগ্য অনুসারী হতে পারবে এবং তাঁর নেতৃত্বে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারবে।
__________________________________________
ইমামে যামানা (আঃ): কুরআন ও হাদিসের আলোকে
"যে ব্যক্তি তার জামানার ইমামকে না চিনে মৃত্যু বরণ করে সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করে।" (মশহুর হাদীস)
এই হাদীসটির মতো আরো কয়েকটি হাদীস আছে। যেমন: "যে ব্যক্তি মারা যায় অথচ তার গলায় বাইয়াতের রশি থাকে না সে কুস্ত্রীর মৃত্যুবরণ করে" (সহীহ্ মুসলিম,তাফসীর ইবনে কাসীর।)
"যে ব্যক্তি ইমাম ছাড়া মৃত্যুবরণ করে সে কুস্ত্রীর মৃত্যুবরণ করে।" (মুসনাদে আহমাদ, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা-৯৬)
এই তিনটি হাদীস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বাইয়াত ও অনুসরণ ছাড়া মারিফাত তথা পরিচয় অর্জন সম্ভব নয়। আর এ কারণে আহলে কিতাব (ইহুদী ও খৃষ্টান) নবী (সাঃ) কে ভালোভাবে চিনলেও তাঁর অনুসরণ করতো না বলে তাদের এ চেনার কোনো মূল্য ছিলো না। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন: "যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা তাঁকে (নবী সাঃ) চেনে সেভাবে, যেভাবে তারা তাদের সন্তানকে চেনে।" (বাকারাহ: ১৪৬, আনআম: ২০)
কারণ, তাওরাত ও ইঞ্জিলে নবী (সাঃ)-এর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিলো।যার কারণে তারা নবী (সাঃ)-এর আগমনের জন্য অপেক্ষাও করতো।
কিন্তু কুরআন কি বলেছে যে, সব জামানায় একজন ইমাম থাকা জরুরী?
অবশ্যই। মহান আল্লাহ কিয়ামত সম্পর্কে বলেছেন "সেদিন আমরা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ইমামসহ ডাকবো।" (বনি ইসরাইল: ৭১)
এজন্যই সকল জামানায় একজন 'সত্য ইমাম' থাকা এবং তাঁর আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক। এই আনুগত্যের কারণে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ইমামের সাথে ডাকা হবে।
কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকে যায় যে, তাহলে কি 'মিথ্যা ইমাম'ও হতে পারে? অবশ্যই। প্রত্যেক ব্যক্তি, যে এমন দীনের অনুসরণ করে যার অনুসরণের অনুমতি আল্লাহ তাকে দেননি;সে ব্যক্তি মিথ্যা ইমাম-এর অনুসারী এবং কিয়ামতের দিন তাকে উক্ত ইমামের সাথেই ডাকা হবে এবং তার সাথেই তাকে জাহান্নামে পাঠানো হবে। যেমন ফেরাউন সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন- 'সে কিয়ামাতের দিন তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং তাদেরকে নিয়ে সে আগুনে প্রবেশ করবে।' (হুদ: ৯৮)
প্রশ্ন হতে পারে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো মানুষের আনুগত্য করা কী জায়েজ? আনুগত্য পাওয়া শুধু আল্লাহরই অধিকার, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আমাদের রিযিক দিয়েছেন এবং সকল প্রকার নেয়ামত প্রদান করেছেন। আর এজন্য মহান আল্লাহ আমাদেরকে যদি কোনো ব্যক্তির আনুগত্য করার আদেশ দেন,তাহলে তাঁর আনুগত্য করা আমাদের জন্য ওয়াজিব। ইরশাদ হচ্ছে- "আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর (কর্তৃত্বের অধিকারী) তাদের।" (নিসা: ৫৯) তিনি আরো বলেছেন: "রাসুলকে এই উদ্দেশ্যেই পাঠিয়েছি যে আল্লাহর অনুমতিতে তাঁর আনুগত্য করা হবে।" (নিসা: ৬৪) রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর আনুগত্য ওয়াজিব। একারণে যে আল্লাহ এব্যাপারে অনুমতি ও আদেশ দিয়েছেন।
এখন বুঝতে হবে আয়াতে উল্লেখিত 'কর্তৃত্বের অধিকারী' (উলিল আমর) কারা যাদের আনুগত্য আল্লাহ ওয়াজিব করেছেন?
যখন এই আয়াত নাযিল হয় তখন নবী (সাঃ)-কে 'উলিল আমর' বা 'কর্তৃত্বের অধিকারী' কাদেরকে বুঝানো হয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তখন তিনি (সাঃ) বলেন, "উলিল আমর হচ্ছে আলী (আঃ) এবং ঐ ইমামগণ যারা তাঁর সন্তানদের মধ্য থেকে হবে" (ফারায়িদুস সামতাঈন)।
ফখরুদ্দীন রাযী তার 'তাফসীর-ই কাবীর' গ্রন্থে এই আয়াত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সকল জামানায় 'উলিল আমর' থাকা অত্যাবশ্যক। এ কারণে আয়াতে যাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে,তাঁরা ঐ সকল লোক যারা সুদীর্ঘকাল ধরে ঈমান আনতে থাকবে। আর এ থেকে উলিল আমরের 'নিষ্পাপ' হওয়ার কথাটিও প্রমাণিত হয়ে যায়। কারণ এখানে তাঁদের আনুগত্যকে নবী (সাঃ)-এর আনুগত্যের সমান বলা হয়েছে। (তাফসীরে কাবীর, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৩৫৭)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "আমার পরে ১২ জন আমীর হবেন, তাঁদের প্রত্যেকেই কুরাইশ থেকে।" (বোখারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাদীস নং-৬৭৯৬)
তিনি (সাঃ) আরও বলেছেন: "আমার পরে ১২ জন ইমাম হবেন, তাঁদের প্রত্যেকেই বনি হাশেম থেকে।" (ইয়ানাবিয়্যুল মুয়াদ্দাত, পৃষ্ঠা-৪৪৫, ইস্তাবুল)
ইবনে আরাবী স্বীয় কিতাব 'ইবক্বাউল ক্বাইয়্যিম'-এর ২৬৬ নং অধ্যায়ে লিখেছেন, "তোমরা নিঃসন্দেহে জেনে নাও মাহদী (আঃ) আত্মপ্রকাশ করবেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর বংশধর এবং ফাতেমা (আঃ)-এর সন্তান হবেন। তাঁর পূর্বপুরুষ হুসাইন বিন আলী ইবনে আবিতালিব (আঃ)। তাঁর পিতা আল হাসান আল আসকারী, ইবনুল ইমাম আলী নাক্বী ইবনুল ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বী ইবনুল ইমাম আলী রেযা ইবনুল ইমাম আল কাযিম ইবনুল ইমাম আস সাদিক, ইবনুল ইমাম আল বাক্কির ইবনুল ইমাম যায়নুল আবেদীন আলী ইবনুল ইমাম আল হোসাইন, ইবনুল ইমাম আলী ইবনে আবিতালিব (আঃ)। তাঁর নাম রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে হবে। মুসলমানরা তাঁর হাতে বাইয়াত হবে রুক্ত ও মাকামের মাঝখানে...।
ইমাম মাহদী (আঃ) ইমাম হাসান আল আসকারী (আঃ)-এর সন্তান। তিনি ২৫৫ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর থেকে তাঁর পিতা তাঁকে শত্রুর ভয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে রেখে ছিলেন। ২৬০ হিজরীতে শত্রুরা তাঁর পিতাকে গ্রেফতার করে হত্যা করে। এসময় আল্লাহ ইমাম মাহদী (আঃ)-কে রক্ষা করার জন্য তাঁকে অদৃশ্য করে ফেলেন। তিনি ২৬০ হিজরী থেকে ৩২৯ হিজরী পর্যন্ত স্বল্পকালীন অন্তর্ধানে ছিলেন। এই সময় তিনি একাদিক্রমে ৪ জন বিশ্বস্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। অতঃপর ৩২৯ হিজরী থেকে এখনো পর্যন্ত তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় দীর্ঘ মেয়াদী অন্তর্ধানে বিরাজ করছেন। যখন আল্লাহর আদেশ হবে তখন তিনি মানবজাতিকে উদ্ধারের জন্য আবির্ভূত হবেন।
তাঁর এ দীর্ঘ জীবন কোনো আশ্চর্যজনক ও নতুন বিষয় নয়। বিশ্বাসীদের মধ্যে হযরত নূহ (আঃ) ও হযরত খিজির (আঃ) এবং ইলিয়াস (আঃ) এবং ঈসা (আঃ) দীর্ঘ জীবন লাভ করেছেন। আর অবিশ্বাসীদের মধ্যে ইবলিস (শয়তান) আর দাজ্জাল দীর্ঘ জীবন লাভ করেছে।
এ ধরনের হাদীস যাহাবী তাঁর 'সিআরু আলামুন নুবালা', খন্ড-১৩, পৃষ্ঠা-৪১, শিবলাঞ্জী তাঁর 'নুরুল আবসার', পৃষ্ঠা ১৮৬ এবং সিত্ত ইবনে জওযী তাঁর 'তাক্বীরাতুল খাওয়াস' গ্রন্থের পৃষ্ঠা ৩৬৩ তে উল্লেখ করেছেন।
শিবলাঞ্জী ও ইবনে সাব্বাঘ মালিকী বলেছেন: "যখন মাহদী (আঃ) আত্মপ্রকাশ করবেন তখন তিনি কাবাগৃহে স্বীয় পিঠ ঠেকিয়ে অবস্থান নিবেন, আর তাঁর ৩১৩ জন পুরুষ তাঁকে আনুগত্য করবেন। সর্বপ্রথম তিনি এই আয়াতটি পাঠ করবেন: 'বাক্বিয়াতুল্লাহি খাইরুল্লাকুম ইন কুনতুম মুমিনীন' (হুদ: ৮৬) এবং বলবেন, 'আমিই বাক্বিয়াতুল্লাহ, আল্লাহর খলিফা এবং তোমাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে কর্তৃত্বকারী।' যে কেউ তাকে সালাম করবে বলবে 'আসসালামু আলাইকা ইয়া বাক্বীয়াতুল্লাহি ফীল আরদ।' (নুরুল আবছার, পৃষ্ঠা ১৭২, আল-ফুসুলিল মুহিম্মা, অধ্যায় ১২)
ইমাম মাহদী (আঃ) অতঃপর তাঁর ৩১৩ জন বিশ্বস্ত সেনাপতি ও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে তাঁর সাহায্যকারীদের দ্বারা এই পৃথিবীকে অন্যায় অত্যাচার থেকে মুক্ত করে পবিত্র করে দিবেন। এ সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেছেন: 'মাহদী আমার আহলে বাইত থেকে হবে এবং পৃথিবীকে সেরূপে ন্যায় ও সাম্যে পূর্ণ করে দিবে যেরূপে অন্যায় ও অত্যাচারে তা পূর্ণ হয়ে পড়বে। (মুসনাদে আহমাদ, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩২৭)
ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমনের আলামত সম্পর্কে যে হাদীসগুলো রয়েছে তা পাঠ করার পর বুঝা যায় যে তাঁর আগমন অত্যাসন্ন। যেমন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, "একদল লোক পূর্ব দিক থেকে বের হবে যারা তাঁর আগমনকে লক্ষ্য রেখে সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করবে।" (সুনানে ইবনে মাযা, খন্ড-২, হাদীস নং-৪০৮৮)
বর্তমান কালেও এর দুটো আলামত দেখা যাচ্ছে: ১. তাঁকে যারা বিশ্বাস করে এবং সাহায্য করতে চায় তাঁরা তাঁর আগমন ত্বরান্বিত হবার জন্য প্রতিদিন দোয়া করছে।
২. তাঁকে সাহায্য করবে এমন এক সৈন্যবাহিনীও মধ্যপ্রাচ্যে তৈরী হচ্ছে।
এভাবে আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ হুজ্জাতের মাধ্যমে সকল দীনের ওপর তাঁর নিজের দীনকে বিজয়ী করবেন "তিনিই তাঁর রাসুলকে পথ-নির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন যেন তাকে সকল দীনের ওপর বিজয়ী করতে পারেন, মুশরিকরা তা যতই অপ্রীতিকর মনে করুক।" (তওবা: ৩৩)
__________________________________________
ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর পেয়গাম (বার্তা) : অনুবাদ
ইমাম মাহ্দী (আঃ) থেকে একাধিক পেয়গাম শীয়াদের কাছে পৌঁছেচে। এই পেয়গামগুলির মধ্যে বেশির ভাগ প্রশ্ন-উত্তর হিসাবে স্থান পেয়েছে। বিভিন্নি সময় 'নওয়াবে আরবাআ'রা' মানুষের বিভিন্ন জিজ্ঞাসা নিয়ে ইমাম মাহদী (আঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে ইমাম (আঃ) একটি লেখা নকশা তৈরী করেন। আর ঐ লেখা নকশাটি কামালুদ্দিন শেখ ছোদুক (৩৮১ হিজ্বরী) এবং ইহুতেজাজে শেখ ত্বাবরেসীর (৫৮০ হিজ্বরী) পুস্তকে স্থান পেয়েছে। ঐ লেখাগুলি ছাড়াও ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর একাধিক উক্তি ও কথা পাওয়া যায়,যা হয়ত শীয়াদের কাছে পৌঁছেচে তাঁর শিশু বয়সে সাক্ষাতের মাধ্যমে কিম্বা গাইবাত কালে সাক্ষাতের মাধ্যমে। ইমাম মাহদী (আঃ)-এর তাওহীদ ও তাফসীরে কোরআন বিষয়ে, ইমামত এবং আহলেবায়েতের স্থান বিষয়ে, বেদ্বীন ও পথভ্রষ্টদের আক্বীদার পরিবর্তন বিষয়ে, ইমাম মাহ্দী হওয়ার মিথ্যাদাবীকারী ও প্রতিনিধি হওয়া বিষয়ে, বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েলের ইমাম (আঃ) কর্তৃক ব্যাখ্যা বিষয়ে, দোয়া ও যকর বিষয়ে, চরিত্র ও ফিক্বহ্ বিষয়ে যে সমস্ত আদেশ-আশ্বাস, কথা ও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, তা শীয়া মাযহাব সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার অতুলনীয় সম্পদ স্বরূপ। এ অধ্যায়ে আমি ইমাম আঃ এর কতকগুলি উপদেশ তুলে ধরছি,--
(ক) মানুষকে নিরর্থক সৃষ্টি করা হয়নি:
" কোনো সন্দেহ নেই, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সৃষ্টিকূলকে বেকার সৃষ্টি করেন নি। আর কোনো উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা ব্যতীত পৃথিবীতে ছাড়েনি" (অনুবাদ)।
(খ) প্রত্যেকটি যুগে আল্লাহ্ র প্রতিনিধি প্রয়োজন:
"কখনও জমীন আল্লাহর হুজ্জাত ব্যতীত শুন্য থাকবে না,তা সেটা প্রকাশ্যে থাক অথবা গোপনে"।
(গ) ইমামতের অধিকার:
"হক্ক আমাদের সঙ্গে; আর আমাদের ব্যতীত কেউ দাবী করলে সে মিথ্যাবাদী"।
(ঘ) গাইবাতের যুগে মানুষের উপকার:
"আমার গাইবাতের যুগে আমার থেকে মানুষ উপকৃত হবে, এটা নিশ্চিত। যেমন সূর্য মেঘের আড়ালে অন্তর্হিত হওয়ার পরেও সূর্য থেকে মানুষ উপকৃত হয়”।
(ঙ) সর্বশেষ ওছি:
"আমি ওছি গণদের মধ্যে শেষতম ওছি। আল্লাহ্ আমার থেকে আমার বংশ এবং শীয়াদের উপর থেকে বালা মঙ্গীবত দূরে রাখবেন"।
(চ) আহলেবায়েতই যথার্থ জ্ঞানের ভান্ডার:
আহলে বায়েতের পথ ব্যতীত অন্য কোনো পথে জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা আমাদের আহলে বায়েতকে অস্বীকার করা।
(ছ) অনুসন্ধিৎসু হওয়া:
যদি তোমরা হেদায়েতের অন্বেষণ কর, তবে হেদায়েত পাবে; আর যদি হক্কের অন্বেষণ কর, তবে হক্ক পাবে।
(জ) মাহ্দী (আঃ)-এর সাক্ষাৎ না পাওয়ার কারণ:
আমাকে আমার শীয়াদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তাদের খারাব আমল। কারণ, খারাব আমল আমার অপছন্দ; আর আমি তাতে অসন্তুষ্ট।
(ঝ) গাইবাতের যুগে শীয়াদের দায়িত্ব:
তোমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব এমন আমল করা, যাতে তোমরা আমার নিকটবর্তী হতে পারো। আর ঐ সমস্ত আমল থেকে দূরে থাকা-যা আমার নিকট অপছন্দ।
(ঞ) নামাজের ফজীলাত:
সমস্ত প্রকার আমলের মধ্যে নামাজ হল সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল। এই আমলের ফলে শয়তান লজ্জিত হয় ও অপমানিত হয়।
(ট) ইমাম (আঃ)-এর সম্পদ:
যে ব্যক্তি আমাদের সম্পদ থেকে (হক্ক ব্যতীত) কিছু খেলো, সে জাহান্নামের আগুন দিয়ে পেট ভরালো।
হে আল্লাহ্ আমাদের নিকট আপনার পুস্তক, দ্বীন এবং ওলী (আঃ)-কে বেশি থেকে বেশি পরিচিতি করান এবং অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন ইয়া রব্বুল আ'লামীন।
__________________________________________
গায়বাতে থাকা ইমামের উপকারিতা
✍️ মইনুল হোসেন
মহান আল্লাহ্ প্রতিটি যুগের মানুষের হেদায়েতের জন্য একজন করে হাদী রেখেছেন। বর্তমান যুগেও আমাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ্ একজন হাদী রেখেছেন। আমাদের শিয়া ধর্মের অনুসারীদের আকীদা হল বর্তমান যুগের হাদী হলেন আমাদের ১২তম ইমাম - ইমাম মাহদী (আঃ)।যিনি বর্তমানে এই পৃথিবীতেই আছেন, জীবিত আছেন, আল্লাহর ঐশী দায়িত্ব সম্পাদন করছেন;কিন্তু গায়বাতে (বা অদৃশ্যে বা লোকচক্ষুর অন্তরালে) রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই শিয়াদের সম্পর্কে যারা খারাপ ধারণা পোষণ করে তারা সঠিকটা না জেনে,না বুঝেই শিয়াদেরকে এই বিষয়ে বিদ্রুপ করে। তারা অভিযোগ করে বলে যে,শিয়ারা এমন একজন ইমামের অনুসরণ করে,যাকে তারা দেখেনি এবং যিনি সামনে এসে তাদেরকে কোনো উপকার করে না।
শিয়াদের বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপনকারীরা অস্বীকারে নিমজ্জিত এবং তারা শিয়াদের যে কোনো বিষয়েই উপহাস করে। এই বিষয়ে যদি আমরা সামান্য আলোচনা করি তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে,তাদের ধারণা কতটা দূর্বল এবং শিয়াদের এই বিষয়ে অভিযোগ করার মাধ্যমে আসলেই তারা ঐশী একটি পদকে (ইমামাতের পদ) অস্বীকার করছে,যা সম্পর্কে মহান নবী (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় মুসলমানদেরকে বহুবার সতর্ক করে দিয়ে গিয়েছেন।
১. অদৃশ্য ইমাম এবং দৃশ্যমান ইমাম একইঃ
একজন দৃশ্যমান ইমাম এবং একজন অদৃশ্য ইমামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কেননা আল্লাহ্ চাইলে তাঁর সৃষ্টিজগত উভয় ক্ষেত্রেই উপকার পেতে পারে। আরও স্পষ্ট করে বলা যায় যে, গায়বাতে (অদৃশ্যে বা লোকচক্ষুর অন্তরালে) থাকার অর্থ লুকানো নয়; যেমনভাবে কেউ একজন কোনো নির্জন আশ্রয়ে বা জঙ্গলে বা গুহাতে কিংবা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারের ভিতরে লুকিয়ে থাকে। আমাদের ইমাম গায়বাতে থাকার পরেও সকলের দৃষ্টির সামনেই থাকেন। পার্থক্য হল যতক্ষণ না তিনি নিজেকে পরিচয় দেন ততক্ষণ অন্যরা তাকে চিনতে পারে না। গায়বাত আমাদের জন্য একটি অসুবিধা, কিন্তু যুগের ইমামের ঐশী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁর জন্য গায়বাত কোনো অসুবিধাই নয়। যেমনভাবে ইউসুফ নবী মিশরীয়দের সাহায্য করে গেছেন,যদিও তাঁর পরিচয় তাদের কাছে গোপন ছিল। তিনি তার ভাইদেরকেও সাহায্য করেছেন, যদিও তারা তাকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছিল। একইভাবে ইমামের অনুগ্রহ, দিকনির্দেশনা এবং অন্যান্য উপকারিতা গোপন বা অজ্ঞাত থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
আল্লাহ্ পবিত্র কুরয়ানে বর্ণনা করেছেন, "আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি" (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)। আল্লাহর নবী (সাঃ) তাঁর সারাটি জীবন হয় মক্কায় নতুবা মদিনায় কাটিয়েছেন। কিন্তু তারপরও তিনি সমস্ত বিশ্বের জন্য ঐশী রহমত ও অনুগ্রহের কেন্দ্র ছিলেন। কারণ তিনি নির্দিষ্ট একটি অঞ্চল বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। তেমনই তাঁর বংশধারা থেকে ইমাম মাহদী (আঃ)-ও সমস্ত বিশ্বের জন্য ঐশী রহমত ও অনুগ্রহের কেন্দ্র। এটি অসম্ভব কিছু নয়;কারণ ইমাম মাহদী (আঃ) গায়বাতে আছেন, কিন্তু কোনও অঞ্চল বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। এইজন্য আমরা ইমাম মাহদী (আঃ)-এর অসংখ্য ঘটনা জানতে পারি,যেখানে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারীদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাদের সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন।
২. অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতা থেকে মুক্তিঃ
আল্লাহ্ কর্তৃক নিযুক্ত ইমামের উপর বিশ্বাস রাখা এবং তার আনুগত্য করা (এমনকি যখন তিনি জনগণের কাছ থেকে অন্তরালে থাকেন) অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতা থেকে মুক্তি দেয়। এটি একজনের ঈমানের হেফাজাত হিসাবে কাজ করে। নবীকরীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি তার যুগের ইমামকে না চিনে মারা যায়, সে জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করে।" অর্থাৎ একজন ইমাম তা তিনি লোকচক্ষুর সম্মুখে থাকুক কিংবা অন্তরালে - মুসলমানদের দায়িত্ব হল তাঁকে স্বীকার করা এবং তাঁর মারেফাত অর্জন করা। সুতরাং অদৃশ্য ইমামের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে ইসলাম-পূর্ব জাহিলিয়াত যুগের ভ্রান্ত আকীদা বিশ্বাস থেকে রক্ষা করে সত্য ও ঐশী পথে চালিত করছেন।
৩. মুসলিম জাতির ঐশ্বরিক শাস্তি থেকে নিরাপত্তাঃ
যতক্ষণ না নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বা তাঁর পবিত্র বংশধর থেকে আল্লাহর একজন হুজ্জাত এই পৃথিবীতে রয়েছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানরা ঐশ্বরিক শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকে। যেমনটি পূর্ববর্তী অনেক নবীদের যুগে ঘটেছিল (যেমন হজর নূহ (আঃ), হজরত মুসা (আঃ)-এর জাতিদের উপর আযাব নেমে এসেছিল)। কোনো এক বর্ণনাকারী ইমাম মুহাম্মদ বাকির (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেন, একজন নবী বা ইমামের প্রয়োজন কেন? উত্তরে ইমাম (আঃ) বলেন, বিশ্বকে সঠিক অবস্থায় টিকে থাকার জন্য নবী বা ইমামের প্রয়োজন। যতক্ষণ পর্যন্ত নবী বা ইমাম উপস্থিত থাকেন, আল্লাহ পৃথিবীতে শাস্তি নামানো বন্ধ করে দেন । যেমন আল্লাহ পবিত্র কুরয়ানে ঘোষণা করেছেন: "এবং আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার ছিলেন না যখন আপনি তাদের মধ্যে ছিলেন।" (সূরা আনফাল, আয়াত ৩৩)
এবিষয়ে মহান নবী (সাঃ)-এর এই হাদিসটিও প্রণিধানযোগ্য,-- “তারকারা আকাশের বাসিন্দাদের জন্য নিরাপত্তা, এবং আমার আহলে বাইত (আঃ) পৃথিবীর বাসিন্দাদের জন্য নিরাপত্তা। সুতরাং, যখনই তারকারা অদৃশ্য হয়ে যায়, আকাশের বাসিন্দাদের কাছে এমন কিছু আসে যা তারা অপছন্দ করে এবং যখন আমার আহলে বাইত (আঃ) চলে যায়, পৃথিবীর বাসিন্দাদের কাছে এমন কিছু আসে যা তারা অপছন্দ করে”। (বিহার আল-আনওয়ার খণ্ড ২৩ পৃ ১৯)
স্পষ্টতই, একজন ইমামের উপর বিশ্বাস স্থাপনের একাধিক উপকারিতা রয়েছে, চাই সে ইমাম গায়বাতে থাকুন বা দৃশ্যমান এবং এর পরিমাণ এত বেশি যে সেগুলি কেবল মুসলমানদের জন্য নয়, বরং যারা ইমামাতের উপর বিশ্বাস রাখে না তাদের জন্যও উপকার বহন করে। গায়বাতে থাকার পরও ইমাম মাহদী (আঃ) এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। বরং আমাদের উপর তাঁর যে অনুগ্রহ, দয়া ও দিকনির্দেশনা বজায় আছে তার জন্যই এই বিশ্ব টিকে আছে এবং তাঁর স্বীকৃতিদান ও তাঁর মারেফাত অর্জনলাভের মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তির দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা সম্ভব হবে।
__________________________________________
সুন্নি আলিমদের মত: ইমাম মাহদী (আঃ) ই দ্বাদশ ইমাম
অনুবাদ : ✍️ মিনহাজউদ্দিন মন্ডল
হজরত ইমাম মাহদী (আ.) হচ্ছেন দ্বাদশ ইমাম। এটিকে প্রতিষ্ঠিত এর করার জন্য শিয়া ইশনা-আশারিদের গ্রন্থগুলি তে অসংখ্য রেওয়ায়েত রয়েছে। এই অধ্যায়ে, এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সুন্নি এবং আগা খানি ইসমাইলি বই থেকে সংক্ষিপ্ত নির্যাসগুলি পুনরুত্থাপন করা হয়েছে। মহানবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের সত্যতা সম্পর্কে সকল মুসলমান একমত যে, তাঁর পরে বারো জন প্রকৃত উত্তরসূরী হবেন।
1. সুন্নি লেখক আবদুল ওয়াহাব তার ‘আল-ইয়াওয়াকিত ওয়া জাওয়াহির’ গ্রন্থে বলেছেন, "যখন পৃথিবীতে অত্যাচার ও ধর্মহীনতা প্রবল হয়ে উঠবে, তখন হজরত মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন। তিনি ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর পুত্র।তিনি 15 শাবান, 5 হিজরি সনের প্রাক্কালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি 15 ই শাবান পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিলেন।"
2. শায়খুল ইসলাম, সুন্নি পন্ডিত আহমদ জামী তার ফারসি গ্রন্থ ‘নাফসাতুল আনাস’-এ কাব্যিক ভাষায় বারোজন ইমামের সমস্ত নাম বর্ণনা করার পর লিখেছেন যে, "হযরত ইমাম আসকারী (আ.) বিশ্ব এবং সমস্ত মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকের আলো এবং তাঁর পুত্র হযরত মাহদী (আ.)-এর মতো পৃথিবীতে কোন অনুরূপ নেই।"
3. মৌলভী জাল্লালুদ্দিন রুমি, তার ‘দেওয়ান আয়াত’এ বারো ইমামের নাম উল্লেখ করে স্পষ্টভাবে দ্বাদশ ইমাম হিসেবে হযরত মাহদী (আ.)-এর নাম উল্লেখ করেছেন।
4. মৌলভী শাহ মুহাম্মাদ কবিরের ‘তাজকিরাতুল কিরাম’ এর 270 পৃষ্ঠায়, প্রামাণিক সূত্র থেকে জানা যায় যে, প্রকাশ্য ও গোপন দুই ধরনের উত্তরাধিকার রয়েছে।ইমাম হাসান (আ.)-এর সময় পর্যন্ত, দুটি প্রকার একত্রিত হয়েছিল, কিন্তু তারপর থেকে শিয়ারা বারো ইমামকে অনুসরণ করেছিল।
5. আহয়াউল উলূমে শাহ আবদুল আজিজ দেহলভী এবং ইমাম গাজ্জালী, দিরাস্তুল লাবীবে মুল্লা মঈন এবং ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর রচনায়, ফাতহুল বারী- সকল প্রখ্যাত সুন্নী আলেমগণ সর্বসম্মতিক্রমে লিখেছেন যে বারো ইমামের জ্ঞান স্বয়ং আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত। রাসুল (সা.) এবং তাঁর কন্যা ফাতিমা (সা.) সহ বারোজন ইমাম মিলে চৌদ্দটি মাসুমিন (নিষ্পাপ) গঠন করেন এবং চৌদ্দজন সম্পর্কে সকল মুসলমানের মধ্যে একমত যে তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তারা কোনো প্রকার পাপ করেনি। (তারিখে ইসলাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯)।
6. আগা খানের রচনায় ‘কানজুল মাসাইব’ শিরোনামে মহামান্য হাসানালি শাহ সাহেব, পৃষ্ঠা 9 এবং 10 এ এবং 22 এবং 23 পৃষ্ঠায়ও বারো ইমামের বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আরও প্রমাণ রয়েছে মহুয়া কমিশনে বিদগ্ধ পার্সি বিচারকের দেওয়া রায়ে যেখানে এটি 56 পৃষ্ঠায় রিপোর্ট করা হয়েছে।
7. ‘ইবরাতুল আফজা’ প্রথম আগা খানের একটি ফারসি আত্মজীবনী। ফার্সি সংস্করণটি 1865 খ্রিস্টাব্দে বাওয়া করিম দাদাজি দ্বারা গুজরাটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল এবং বোম্বেতে ওরিয়েন্টাল প্রেস দ্বারা মুদ্রিত হয়েছিল। পৃষ্ঠা 19-এ তিনি বলেছেন, "অনেক প্রজন্ম ধরে, আমার পূর্বপুরুষরা মিশরীয় সরকারে মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারা জাফরি বিশ্বাসের কোড এবং দ্বাদশ ইমাম ইত্যাদি দ্বারা বর্ণিত আইন অনুসরণ করেছিলেন।"
8. আগা খান প্রথমের পুত্র আগা জাহাঙ্গীর শাহ ফার্সি ভাষায় তাঁর ধর্মীয় বিধানের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেন। এটি 1313 হিজরিতে বোম্বেতে দাতপ্রসাদ প্রিন্টার্স দ্বারা মুদ্রিত হয়েছিল, এতে তিনি বলেছেন: “আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে হজরত আলী মুর্তজা (আ.) এবং তাঁর এগারোজন পুত্রের প্রত্যেকেই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উত্তরসূরি এবং তাদের প্রত্যেকেই একজন সত্যিকারের ইমাম৷”
9. আগা খান দ্বিতীয়, মহামান্য আগা আলিশাহ, সিন্ধি ভাষায় নামাজ ও উপবাসের নিয়ম সম্পর্কে তাঁর উদ্ধৃতি জারি করেন। 15 পৃষ্ঠায়, মহুয়া কমিশন রিপোর্টের 17 নম্বর লাইনে, দ্বাদশ ইমামকে (আ.) সালাম পাঠ করার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে, 34 পৃষ্ঠার 17 নং লাইনে ইমাম হোসেইন (আ.)-এর প্রতি সালাম পাঠ করার নির্দেশ রয়েছে। একইভাবে, 35 পৃষ্ঠার 6 নং লাইনে, দ্বাদশ ইমাম (আ.)-এর প্রতি সালাম পাঠ করার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। একই পৃষ্ঠায়, ১০ নম্বর লাইনে, "মুহাম্মদ, আলী, ফাতিমা, হাসান, হুসায়েন- এই পাঁচ পঞ্জতন এবং চৌদ্দ মাসুমিন" নামে প্রার্থনা করার আদেশ রয়েছে। আর কী প্রমাণের দরকার আছে?
সুতরাং ইমাম মাহদী আঃ যে দ্বাদশ ইমাম,তা একাধিক গ্রন্থের বর্ণনা য় প্রমাণিত।
মূল গ্রন্থ : IMAME ZAMAN HAZRAT MAHDI (A.S)
লেখক : Murtaza a. Lakha
__________________________________________
ইমাম মাহদী আঃ:দ্বীন ইসলামের সর্বশেষ প্রতিনিধি
إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
''নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে যাচ্ছি'' ( সুরাহ বাকারা, 30 নম্বর আয়াত)
আল্লাহ রব্বুল আলামীন কোরান মজিদে বলছেন যে,আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে যাচ্ছি। উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির প্রথমে হজরত আদম আঃ কে প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।অতঃপর আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর দ্বীনকে পৃথিবীর বুকে প্রচার ও প্রসারের জন্য একে একে নবুওয়াতি প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন।যার শেষ হলেন হজরত মহম্মদ মোস্তফা (স:)। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণতার লক্ষ্যে তাঁর সর্বশেষ নবুয়াতি প্রতিনিধি দ্বারা ইমামতের সূচনা করেন এবং প্রত্যেকটি যুগে একজন করে প্রতিনিধি বা হাদী যে রাখবেন ,তাও স্পষ্ট করেছেন--"সেদিন আমরা প্রত্যেক ব্যক্তিকে কে তার ইমাম সহ ডাকবো" (সুরা বনি ইসরাইল:৭১)। সুতরাং বলা যায়, আল্লাহ রব্বুল আলামীন দুনিয়াকে হুজ্জাত ব্যতীত খালি রাখেন নি। প্রত্যেক যুগের জন্য একজন করে হেদায়াত কারী রেখেছেন।
শিয়া আকিদা এবং গবেষণা অনুযায়ী অনুযায়ী , বর্তমান সময়ে এই দুনিয়ার হাদী বা পরিচালক হলেন দাদ্বশ ইমাম হজরত ইমাম মেহেদী আখেরী যামান (আ:)।অনেক মুসলমানের আকিদা আছে যে,ইমাম মাহদী (আ:) এর জন্ম হয় নি।তাদের এ ধারণা একেবারেই ভুল।কারণ আল্লাহ রব্বুল আলামীন প্রতিনিধি ছাড়া তাঁর দ্বীনকে ছাড়েন নি। কোরানে কারীমে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের ওয়াদা অনুযায়ী প্রত্যেক যুগের জন্য তিনি এক একজন হাদী বা প্রতিনিধি রেখেছেন।আর এ যুগের হাদী হলেন আল্লাহ র রাসুল সাঃ এর সন্তান ইমাম মাহদী আঃ।
ইমাম মেহেদী (আ:) এর জন্ম হয়েছিল ১৫ই সাবান ২৫৫ হিজরী ইরাকের সামরা শহরে।
২৬০ হিজরী, তাঁর গাইবাতে বা পর্দার আড়ালে যেতে হয় খোদার নির্দেশনায়। ইমামের দুটি গাইবাত রয়েছে।যথা--
১. গাইবাতে ছোগরা (সময় কাল- ২৬০ হিজরী থেকে ৩২৯ হিজরী) এবং
২. গাইবাতে কোবরা (৩২৯ থেকে বর্তমান সময় যত দিন না তিনি আসছেন)
বর্তমানে আমারা গাইবাতে কোবরার যুগে আছি।এই সময়
ইমামে যামানা আঃ সর্বদা আমাদের সহযোগীতা করে যাচ্ছেন ।
ইমামে যামানার সাক্ষাত লাভের জন্য বিভিন্ন হাদীসে দোয়া ও আমলের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। একাধিক আলিমে দ্বীন, সাধারন মানুষ ইমামে সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং করছেন।
শেইখ সাদুক, শেইখ মুফিদ ও শেইখ তুসী-র মত বড় বড় মনীষী নিজেদের গ্রন্থসমূহ দ্বাদশ ইমামের সাক্ষাত লাভকারীদের নাম উল্লেখ করেছেন।
অর্থাৎ উপরিউক্ত আলোচনায় এটাই বোঝা যায় যে,বর্তমানে মহা পৃথিবীর পরিচালক বা প্রতিনিধি হলেন ইমামে যামানা(আঃ)। তাঁর জহুর তাড়াতাড়ি হোক এবং তিনি দুনিয়াকে ন্যায় বিচারে পরিপূর্ণ করুন,এটাই আমাদের সকলের দোয়া হওয়া প্রয়োজন।
__________________________________________
ইমাম মাহদী (আঃ) জন্য অপেক্ষা: গভীরতা ও গুরুত্ব
✍️ রাজা আলী
"অপেক্ষা" শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো আশা করা বা চেয়ে থাকা। কারো আশায় বা কোনো জিনিসের আশায় বসে থাকাই হলো অপেক্ষা করা।কোনো কিছুর আশায় পথ চেয়ে থাকা আমাদের জীবনের একটি সাধারণ বিষয়। অর্থাৎ বাস্তব জীবনে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বা জিনিসের জন্য অপেক্ষা করে থাকি । কিন্তু এই অপেক্ষা যদি মানুষ বা কোনো জিনিসের জন্য না হয়ে যুগের ইমাম আঃ এর জন্য হয়ে থাকে ,তবে তা সর্বোচ্চ মাত্রাপ্রাপ্ত হয়। এ কারণেই আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন--
"উত্তম এবাদাত হলো ইমাম মাহদী আঃ এর আবির্ভাবের অপেক্ষা করা"(ফারাইদুস
সিমতাইন)।
শিয়া আক্বীদা অনুযায়ী ইমাম মাহদী আঃ জন্মগ্রহণের পর "গায়বতে ছোগরা"র যুগ অতিবাহিত করে বর্তমান "গায়বতে কুবরা"তে অবস্থান করছেন।এই গায়বতের মধ্যে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের বিশেষ নেয়ামত ও উদ্দেশ্য রয়েছে।আর এ কারণেই ইমাম মাহদী আঃ এর পবিত্র গায়বতী অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের প্রখর সচেতনতা থাকতে হবে।তাঁর অস্তিত্ব কে স্বীকার করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতি অবিচল ভালোবাসা আমাদের আখেরাতের সুসংবাদ।আর তাঁর প্রকাশ্য অনুপস্থিতির যুগেও তাঁর অপেক্ষা করা যে, প্রত্যেক যুগের মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড,তা একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে--
"নিশ্চয় তাঁর (ইমাম মাহদী আঃ) গায়বতের যুগের লোকেরা,যারা তার গায়বতকে বিশ্বাস করে এবং জহুরের জন্য অপেক্ষা করে,তারা প্রত্যেক যুগের মানুষের চেয়ে উত্তম (কামালুদ্দীন )।
সুতরাং ইমাম মাহদী আঃ এর অপেক্ষা কারীরাই উত্তম ব্যক্তি এবং মুমিনের প্রকৃত বৈশিষ্ট্যে অন্বিত।
অপেক্ষা দুই রকমের ।একটি হলো অল্প সময় বা সীমাবদ্ধ সময়ের জন্য ;অপরটি দীর্ঘ সময় বা সীমাহীন সময়ের জন্য।যুগের ইমাম আঃ এর জন্য এই দ্বিতীয় প্রকার অপেক্ষা টি প্রযোজ্য।আর এই অপেক্ষা টিই শ্রেষ্ঠ অপেক্ষা।কারণ এক্ষেত্রে সংযম এবং ধৈর্যের প্রয়োজন হয়।ইমাম মাহদী আঃ"গায়েতে কুবরাতে" থাকার কারণে তাঁর আবির্ভাব সম্পূর্ণ আল্লাহ রব্বুল আলামীনের মর্জির উপর।তাই ইমাম মাহদী আঃ এর অনুসারী দের অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সময়।যিনি প্রকাশ্যে নেই,তাঁর উদ্দেশ্যে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করার মতো গূঢ় বৈশিষ্ট্যের কারণেই এটি উত্তম এবাদাত হিসাবে পরিগণিত।
এই সমস্ত কারণে ইমাম মাহদী আঃ এর আর্বিভাবের অপেক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।তাঁর অপেক্ষার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এবাদাতের পূর্ণতা।অপেক্ষার গুরুত্ব বোঝানো র জন্য হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি ইমাম আঃ এর অপেক্ষা করতে করতে মারা যান,তবে তিনি মারা যান নি ইমাম আঃ এর সঙ্গী এবং শহীদ হয়েছেন। সুতরাং ইমাম আঃ এর জন্য প্রতীক্ষা করার অর্থ হলো ইমামের প্রতি মহব্বতের দিন অতিবাহিত করা, কিংবা শাহাদাত বরণ করা এবং তাঁর সান্নিধ্য লাভ করা।
__________________________________________
__________________________________________
------------------------------------------------
||| কবিতা য় দ্বীনি বার্তা |||
------------------------------------------------
__________________________________________
💐💐 শহীদের স্মরণে 💐💐
কুফাতে হযরত আলীর শাহাদত
হৃদয় জখম করে আছে,
এই বেদনা ভরা স্মৃতি আজও ভাসে
ইমামে যামানার কাছে।।
ফাতেমা যাহরার পাঁজর ভাঙ্গার
ব্যাথিত অন্তরকে কাঁদায়,
বিচার হয়নি আজও
আছি মোরা বিচারের অপেক্ষায়।।
দাফন করতে দেয়নি
তীর মেরেছে জানাযায়,
ইমাম হাসানের শহীদের আর্তনাদ
পর্দার অন্তরালে শোনা যায়।
কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে
আজও কারবালায়,
শহিদ হুসায়েনের বদলার জন্য
শেষ হুজ্জাত আছেন অপেক্ষায়।
কাউকে কয়েদখানায়
কাউকে শহিদ করেছে বিষ দিয়ে,
ইমামে জামানার রক্ত অশ্রু
আজও ঝরছে অঝরে।
ইমাম জাফর সাদিক মাটিতে
লুটিয়ে পড়তো যার শোকে,
না জানি কেমন দুঃখে আছেন তিনি
হে! রব সমাপ্ত করে তার দুঃখকে।।
__________________________________________
💐💐 ইচ্ছা 💐💐
হৃদয়ের প্রচ্ছন্ন ইচ্ছা ফুল হয়ে ফোটে
চারিদিকে র পৃথিবী সুন্দর হয়ে ওঠে
হে ইমাম,তোমাকে প্রাণভরা শুকরিয়া
খুশিতে ভরেছে আজ আমাদের হিয়া।
এখনো অনেক পথ চলা রয়েছে বাকি
খোলা থাকুক তোমার প্রতি মোর আঁখি
তুমি ই বিশ্বের বর্তমান নিয়ন্ত্রণ শক্তি
মরণ আসুক তোমার প্রতি নিয়ে ভক্তি।
জীবনের গলিঘুচি 'মাহদী' নামে সুন্দর
ওই নামে বেজে উঠুক হৃদয়ের অন্দর
প্রতিজন অনুসারী হয়ে উঠুক মুনতাজার
'মাহদী' নামে ছুটে যাক সকল হৃদয় ভার।
__________________________________________
💐💐 আধ্যাত্মিক জ্ঞানী 💐💐
খুশি, আকাশ- বাতাস- তাবৎ ভূমণ্ডল
যার আগমনে বইবে- আনন্দ হিন্দোল,
অশান্তিকে করবে- শান্তি মশালে উজ্জল
মানুষে- মানুষে- ভ্রাতৃত্ব বন্ধন প্রাঞ্জল।
তাঁর আগমনি বার্তা দেবে সিয়াম মাস
একই মাসে চন্দ্র-সূর্য- গ্রহণ উচ্ছ্বাস,
হবে চল্লিশ বছরে ‘নূরালোর' প্রকাশ
মেটাবেন- ভবের যত শান্তির পিয়াস।
গড়বেন- স্রষ্টার সাথে- সৃষ্টির সম্পর্ক
ভাঙবেন এজিদি বিশ্বাস- হয়ে সতর্ক,
ফাসেকদের লালিত লেলিহান ঐ ঘাঁটি
ভেঙে হবে চুরমার- রবে ঈমান খাঁটি।
ক্বালবি শিক্ষায় শিক্ষিত আধ্যাত্মিক জ্ঞানী
রাসূল নূরে- নূরান্বিত- তার মুখ খানি,
তাঁর নূরেতে ভেগে যাবে যত কৃষ্ণ-কালো
উঠবে জ্বলে রাসূলের দ্বীনি প্রভা আলো।
ইসলামের শত্রু আজ- উন্মত্ত- ঔদ্ধত্য
মোনাফেক মুসলিমরা- যত নত, তত,
অধির আগ্রহে অপেক্ষমান- সত্যবাদী
কখন এসে ধরবে হাল- ‘ইমাম মাহদী'।
__________________________________________
No comments:
Post a Comment